রূপ কথার দেশে বিশ বছর

শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে যখন বাড়ির পথে হাঁটছিলাম, পথটা আমার চেনা থাকার কথা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে মনে হল—এ পথ আমি কখনও হাঁটিনি। কেমন যেন অপরিচিত, শূন্য, নিস্তব্ধ। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকও থেমে গেছে। আমি যত এগোতে লাগলাম, চারপাশ যেন বদলে যেতে লাগল। পরিচিত গাছপালা মিলিয়ে গেল, জায়গা করে নিল রঙিন আলো আর অদ্ভুত গন্ধের বাতাস।একসময় মাথা ঘুরে এল, আর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম।চেতনা ফিরে দেখি—আমি এক অদ্ভুত দেশের এক প্রাসাদের বাগানে বসে আছি। মাটির রং যেন সোনালী, ঝলমল করে আলো ছড়াচ্ছে। চারপাশে অজস্র ফুল, ফল, এমন গাছ যার নাম আগে কখনও শুনিনি। বাতাসে মিষ্টি সুবাস, অথচ কোথাও একটি মানুষের ছায়াও নেই।ধীরে ধীরে আমি বুঝলাম, এটা কোনো স্বপ্ন নয়। আমি সত্যিই এক ‘রূপ কথার দেশে’ এসে পড়েছি। রাজপ্রাসাদগুলো রঙিন মেঘের মতো ঝকঝক করছে, নদীগুলো সোনার ধুলো বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষ নেই—শুধুই প্রকৃতি আর সৌন্দর্যের রাজত্ব।এভাবেই কেটে গেল আমার বিশ বছর। প্রতিদিন নতুন প্রাসাদ আবিষ্কার করতাম, নতুন ফুলের সুবাস নিতাম, গাছের ফল খেয়ে বেঁচে থাকতাম। কখনও মনে হত, আমি সময়ের আগেই দৌড়ে চলে এসেছি। আমার বয়স বাড়ছে, অথচ এই দেশে কোনো দিন-রাতের পার্থক্য নেই, কেবল অবিরাম আলো।একদিন হঠাৎ আবার মাথা ঘুরে এল। চোখ খুলতেই দেখি আমি সেই মসজিদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশে আগের মতোই দুপুরের রোদ, মাটি শুকনো, বাতাসে গরম হাওয়া। যেন কিছুই ঘটেনি।আমি বাড়ি গিয়ে দেখি মা খাবার সাজিয়ে রেখেছে। বলল—“কোথায় গিয়েছিলি, এত দেরি করলি কেন?”আমি থমকে গেলাম। বুঝলাম, এখানে এক মুহূর্তও পার হয়নি, অথচ আমি অন্য এক দেশে কাটিয়েছি বিশ বছর।ঘটনাটা আমি কাউকে বলিনি। শুধু নিজের ভেতর চাপা এক রহস্য হয়ে থেকে গেল—আমি কি সত্যিই রূপ কথার দেশে বিশ বছর কাটিয়ে এলাম,না কি সবটাই ছিল এক অলৌকিক স্বপ্ন?