ছায়ার আড়ালে

রাত তিনটা বাজে। চারদিকে গভীর নিস্তব্ধতা। শহরের উপকণ্ঠে বসবাস করা অংকিতা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সে জানেও না, কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার জীবনে ঘটতে চলেছে এক নতুন নাটক।একটি কালো রঙের মোটরসাইকেল এসে থামে অংকিতার বাড়ির গেটে। আরোহীর গায়ে কালো লেদার জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট, মুখে মুখোশ। হাতে চকচকে একটি ছুরি। নিঃশব্দে সে প্রাচীর টপকে পড়ে অংকিতার বারান্দায়। মোবাইলে কল দেয়।ঘুম ভেঙে যায় অংকিতার। ফোনের স্ক্রিনে কোনো নাম নেই, কেবল “Unknown Number”। ভয় ছড়িয়ে পড়ে তার চোখে-মুখে। কারণ বিগত কয়েকদিন ধরেই এই নাম্বার থেকে আসছিলো মৃত্যুর হুমকি।সে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়। তার বুক কাঁপছে, কিন্তু মুখ শক্ত। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শেষমেশ সাহস করে দরজাটা একটু ফাঁক করে দেয়।মুখোশধারী ব্যক্তি তৎক্ষণাৎ ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে। শুরু হয় দস্তাদস্তি। কিন্তু হঠাৎ করেই দৃশ্যপট পালটে যায়। অংকিতা পাশের টেবিল থেকে একটা সুঁই-ধারালো পেন তুলে তার গলায় বসিয়ে দেয়। মুহূর্তেই ছুরাসহ সেই আগন্তক লুটিয়ে পড়ে।একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে অংকিতা ফোনে কাউকে কল করে—“৩৫ নম্বর সাফ হয়ে গেছে। লাশটা তুলে নাও। পাঁচ মিনিটের মধ্যে।”চোখে-মুখে একরাশ প্রশান্তি, যেন কাজটা তার জন্য একঘেয়ে রুটিন মাত্র।অংকিতা কে? সমাজের চোখে একজন সফল নার্সিং অফিসার। দয়ার সাগর, সদা হাস্যোজ্জ্বল। কেউ কল্পনাও করতে পারে না, এই মেয়েটিই একটি সুপরিকল্পিত হত্যাচক্রের হোতা। তার টার্গেট— ধনবান অথচ সমাজের অন্ধকার গলিতে লুকিয়ে থাকা অপরাধী পুরুষরা। তাদেরকে প্রেমের জালে ফেলেন, প্রতিশ্রুতি দেন কিংবা ভয় দেখান, তারপর নির্জনে ডেকে নেন নিজের ফাঁদে। যারা পালাতে চায়, তাদের মেরে ফেলেন। আর লাশ অপসারণের জন্য রয়েছে বিশেষ “ডিসপোজাল টিম”।সর্বশেষ লাশের পকেট থেকে পাওয়া যায় একটি চাবির রিং— যেখানে অংকিতার পুরনো প্রেমিক রিজভীর নাম খোদাই করা। রিজভী তাকে একসময় ভয়াবহভাবে প্রতারিত করেছিল। এখন সে বিদেশে থাকে।অংকিতা তার পরবর্তী টার্গেট ঠিক করে ফেলেছে— রিজভী। সে এবার দেশে ফিরেছে। অংকিতা তাকে ফাঁদে ফেলতে প্রস্তুত।ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে... রিজভী কিন্তু বোকা নয়। সে বুঝতে পেরেছে, কেউ তাকে অনুসরণ করছে। গোপনে সে প্রাইভেট গোয়েন্দা নিয়োগ দিয়েছে। এই গোয়েন্দা অনুসন্ধান করতে করতে পৌঁছে যায় অংকিতার গোপন আড্ডায়— যেখানে রয়েছে তার ল্যাপটপ, লাল ডায়েরি আর লাশের ছবি ও নামের তালিকা।এক রাতে সেই গোয়েন্দা অংকিতার ঘরে ঢুকে যায়। কিন্তু ফিরে আসে না।রিজভী এবার নিজেই নামল মাঠে। একদিন সন্ধ্যায় অংকিতার দরজায় বেজে ওঠে বেল...এক রুদ্ধশ্বাস খেলায় পড়ে যায় অংকিতা— হন্তারক আর শিকারের পার্থক্য ঘোলাটে হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কে বাঁচে, কে মরবে? সেটা রয়ে যাক রহস্যে...