গ্রামীণ সরল জীবন এর মধ্যে দিয়েও একটা মেয়ের সংগ্রামী জীবন এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তার প্রাণ যাওয়ার ছোট গল্প
ছাতিমের ঘ্রাণ
অক্টোবর এর শেষ তখন। রাতের বেলা কনকনে শীত পড়ছে।কোথাও কোনো জনমানব নেই।রাত প্রায় দশটা।নীরা গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটছিলো।দূর থেকে ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।হালকা ভয় ভয় লাগছে নীরার। মনে হচ্ছে পেছনে কেউ পিছু নিয়েছে তার। তবুও পেছনে ফেরার সাহস হচ্ছেনা। একবার মনে হচ্ছে সে ভুল ভাবছে। নাহ সে সত্যি টের পাচ্ছে। পেছনে কেউ আছে।নীরার ইচ্ছে করছে ছুটে পালাতে। সে পারছেনা।তার পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।গ্রামের মানুষ গুলো কেন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়, নীরা মনে মনে রাগ করে বলে। একটু সামনে যেতেই সে হাকীম চাচার কথা শুনতে পায়। একটু সাহস পায় সে।ব্যাগ থেকে আস্তে করে ফোনটা বের করে সে।পেছনে ফেরে আলো জ্বালায়। - এ কি,জয় দা আপনি? - নীরা চুপ,আস্তে কথা বল।তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার। - কিসের কথা।আস্তে বলবো কেন। আপনি আমার পিছু নিচ্ছেন কেন? জোরে চিৎকার করে সে। -নীরা এই কাগজটা রাখ। একটা কাগজ হাতে গুজে দেয় জয়,নীরার হাতে। পরমুহূর্তেই অনেক লোক জড়ো হয়ে যায় সেখানে।সব বুঝে উঠার আগেই ইশফাকদের দল এসে তাকে মারতে শুরু করে।গ্রাম বাসীরা কেউ তাকে সাহায্য করার জন্য পা বাড়ায় না।খবর শুনে জয়ের মা আর ছোট বোন ছুটে আসে,অনেক কাকুতি মিনতি করে তাকে উদ্ধার করে।কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যায়। নীরারা যার যার মতো সবাই বাড়ি ফিরে যায়। পরের দিন নীরা মা তাকে চুল আছড়ে দিচ্ছিলো,শিউলি গাছের তলায়। নীরা মনে মনে অনেক কিছুই ভাবছে।কিন্তু হিসাব মিলাতে পারছেনা।স্কুলে থাকতে জয়ের সাথে নীরার খুবই ভালো সম্পর্ক ছিলো। কখনো জয় দা তাকে খারাপ কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।সারাদিন পড়ালেখা নিয়ে থাকতো।নীরাকেও সাহায্য করতো।তাহলে কালকে রাতে হঠাৎ কি হলো এমন।অবশ্য মানুষ পাল্টাতে সময় লাগেনা।হঠাৎ করে মুন্সী চাচার বউ ক্ষেত দিয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে তাদের তাদের বাড়িতে আসে।তার কাছে খবর শুনে নীরা একমুহূর্ত থমকে যায়।জয় দা মারা গেছে।তাদের বাড়িতে পুলিশ আসছে।নীরার মা ভয়ে আৎকে উঠে। তারপর বাড়িতে পুলিশ আসে।তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।নীরা ঘোরের মধ্যে থাকে।সব দুঃস্বপ্নের মতো লাগে।নীরা নিরপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশ তাকে আর থানা পর্যন্ত নিয়ে যায়নি।ওদিকে আশফাকদের দল পালিয়ে যায়।কয়েকদিন ধরে সারা গ্রামে এইসব নিয়ে বেশ তোরজোড় শুরু হয়।হিন্দু মুসলমানে রেষারেষি শুরু হয়।কেউ কেউ আবার নীরাকেও দুশ্চরিত্রা বলতে ছাড়েনি।এভাবেই মাস দেড়েক চলে যায়।জয়ের পরিবারও কোনো বিচার পায়না। দেড় মাস পরে নীরা আবারও সেই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলো।অমাবস্যার রাত,ঘোর অন্ধকার। নীরা দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে।হঠাৎ করে কয়েকটা শেয়াল তার চারদিক ঘিরে ধরে।নীরা ভয়ে কথা বলতে পারেনা। তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।একজন তার মুখ চেপে ধরে।নীরা বুঝতে পারে মানুষরুপি শেয়ালদের থেকে তার নিস্তার নেই।সে বুঝতে পারে তারা কারা।শেয়ালরা চলে যাচ্ছে।নীরার পেটে ছুরি মেরে।হঠাৎ নীরা ছাতিমের ঘ্রাণ পায়।জয়ের চিরকুটটায় কি লিখা ছিলো সে বেশ বুঝতে পারে।ছাতিমের ঘ্রাণ আরও বেশি করে আসতে শুরু করে। - কিরে দেখলিতো।আমাকে তো বিশ্বাস করলিনা। - জয় দা, তুমি কোথায়।আমি তোমাকে দেখতে পারছিনা কেন? - দেখতে পাবি।চোখটা বুজলেই দেখতে পাবি।
0 Comments