বিয়ে ছাড়া বাসর

সুমন রাতের অন্ধকারে বাড়ির পথে হাঁটছিল। আকাশে মেঘ জমেছে, বাতাসে গুমোট গন্ধ। হঠাৎ করেই রাজকীয় পোশাকে কিছু মানুষ কোথা থেকে উদয় হয়ে তাকে ঘিরে ফেলল। তাদের চোখে এক অদ্ভুত শীতল দৃষ্টি, ঠোঁটে হালকা হাসি।একজন এগিয়ে এসে দৃঢ় কণ্ঠে বলল—“চল, আজ রাত বারোটায় তোমার বাসর।”সুমন থমকে গিয়ে বলল—“কিন্তু… আমি তো কাউকে বিয়ে করিনি!”তার কথা যেন কেউ শুনলই না। মুহূর্তেই তাকে টেনে হিঁচড়ে অচেনা পথে নিয়ে যাওয়া হল। কিছুদূর পর হঠাৎ করেই চারপাশ ঝলমল করে উঠল হাজারো রঙের আলোয়। খোলা আকাশের নিচে এক বিশাল মঞ্চের মতো জায়গা, মাঝখানে লাল বেনারসি পরা এক নারী বসে আছে। খোলা চুল ছড়িয়ে, ঠোঁটে একরাশ রহস্যময় হাসি।সুমনকে জোর করে সেই সাজানো বিছানায় বসিয়ে দিল লোকগুলো। তারপর তারা হঠাৎ মিলিয়ে গেল বাতাসে।নারী খিলখিল করে হেসে বলল—“আজ তোমার আর আমার বাসর রাত… তবে তুমি আমার কাছে আসবে না।”মুহূর্তেই আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল, নারীর মুখ যেন সূর্যের মতো দীপ্তিতে ভরে গেল। সুমন চোখ মেলে রাখতে পারল না, অদৃশ্য বাদ্য থেমে গেল, আলো নিবে গেল, চারপাশে কেবল অন্ধকার।চোখ খুলে দেখে সে দাঁড়িয়ে আছে নিজের বাড়ির পাশের আমবাগানে। ভয়ে ভীত, কিন্তু বুকের গভীরে অদ্ভুত এক ভাললাগা গেঁথে রইল।পরের দিন রাতে অস্থিরতায় ভুগতে ভুগতে আবার সেই বাগানে গেল সুমন। হঠাৎ করেই আবার আলো, বাদ্য আর সাজানো বিছানা। কিন্তু এবার সেখানে বসে আছে এক যুবক, পাশে আগের সেই রমণী। যুবকের সঙ্গে হাসি-তামাশায় মেতে আছে সে।হঠাৎ মেয়েটির দৃষ্টি সুমনের চোখে এসে পড়ল। আবার সেই অগ্নিময় দীপ্তি! পুরো বাগান জ্বলে উঠল আগুনের মতো আলোয়। সুমন ভয়ে চোখ বন্ধ করল।চোখ খুলে দেখে আবার অন্ধকার। বাতাসে কেবল পচা ফুলের গন্ধ। দূরে শেয়ালের হাহাকার। চারপাশে কেউ নেই।কিন্তু এবার সে নিশ্চিত—ওই নারী তাকে ডাকছে।প্রতিদিন রাত বারোটায়।শুধু সে-ই জানে, এই বাসর কখনো শেষ হবে না।