হিটলারের আত্মা

রাত তখন প্রায় দু’টো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো লাইব্রেরি ভবনে গবেষণা করছিল ইতিহাসের ছাত্র রাফি। বিষয় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের না বলা কিছু অজানা রহস্য। হঠাৎ আলো নিভে গেল। জেনারেটরও কাজ করছিল না। অন্ধকারের মধ্যে সে শুনতে পেল অদ্ভুত ফিসফিসানি—জার্মান ভাষায় কিছু উচ্চারণ।রাফি ভেবেছিল হয়তো হ্যালুসিনেশন। কিন্তু চোখের সামনে হঠাৎ এক ছায়ামূর্তি ভেসে উঠল—কালো কোট, গোঁফ কাটা মুখ, ভীষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। কণ্ঠস্বর যেন মাটির ভেতর থেকে উঠে আসছে—“আমাকে ভুলে গেছ? আমি অ্যাডলফ হিটলার। মৃত্যু আমাকে থামাতে পারেনি।”রাফির শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। সে তো জানত, হিটলার আত্মহত্যা করেছিল বার্লিনে। কিন্তু আত্মা কি সত্যিই ঘুরে বেড়াতে পারে?হিটলার বলল,“মানুষ ভাবে আমি শেষ। কিন্তু আমার আত্মা ঘুমায়নি। আমি খুঁজছি নতুন বাহন—একজন যুবক, যে আমাকে পুনর্জন্ম দেবে। যুদ্ধ শেষ হয়নি।”রাফি কাঁপা গলায় বলল, “তুমি কি আমাকেই বেছে নিয়েছ?”আত্মার চোখে ভয়ংকর আগুন জ্বলে উঠল।“হ্যাঁ। তোমার ভেতরে আছে বিদ্রোহের আগুন, ক্ষোভ, আর প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা। তুমি আমাকে চাইলে, আমি তোমাকে শক্তি দেব। আমি পৃথিবীর ইতিহাস আবার লিখব, তোমার শরীর দিয়ে।”রাফি আতঙ্কে বইয়ের তাকের দিকে ছুটল। হঠাৎ একটা পুরনো ডায়েরি তার হাতে এসে পড়ল—বার্লিন থেকে আনা এক সৈন্যের লেখা। সেখানে সতর্কবাণী ছিল—“হিটলারের আত্মা একদিন ফিরে আসবে। তাকে প্রতিহত করতে হলে সত্যকে আঁকড়ে ধরতে হবে, নতুবা পৃথিবী আবার আগুনে জ্বলবে।”রাফি চিৎকার করে উঠল, “না! আমি তোমাকে আমার ভেতরে ঢুকতে দেব না।”কিন্তু অন্ধকারে হিটলারের আত্মা হাসল। সেই হাসি যেন কবরের ভেতরের হাড়গোড় কাঁপানো শব্দ।“তুমি যতই অস্বীকার করো, আমি তো শুধু ছায়া। একদিন তোমার স্বপ্নে, তোমার রক্তে আমি জায়গা করে নেব। আর তখন পৃথিবী আবার দেখবে—হিটলারের প্রত্যাবর্তন।”তারপর ঘর আলোকিত হয়ে উঠল। বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে। চারপাশে আর কিছু নেই, শুধু টেবিলের উপর খোলা ডায়েরি, আর রাফির শরীর ঘামে ভিজে কাঁপছে।সে জানে না, হিটলারের আত্মা কি সত্যিই তার মধ্যে ঢুকে পড়েছে, নাকি সবটাই বিভ্রম। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত—এরপর থেকে সে যখনই আয়নায় নিজের চোখে তাকায়, মাঝে মাঝে সেখানে জ্বলতে থাকা ভৌতিক আগুন দেখতে পায়।